Blog
শিশুদের জন্য ইন্টারনেট নিরাপদ করতে ইউনিসেফ ও ফেসবুকের যৌথ উদ্যোগ

অনলাইনে শিশুদের ব্যাপক উপস্থিতি সত্ত্বেও, তাদের ডিজিটাল দুনিয়ার বিপদ থেকে সুরক্ষিত রাখতে এবং তাদের নিরাপদ অনলাইন কনটেন্ট ব্যবহারের সুযোগ বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে খুব সামান্যই কাজ হয়েছে। এ অবস্থায় ইউনিসেফ ও ফেসবুক আজ এক বছরব্যাপী একটি ব্যাপক সচেতনতামূলক কর্মসূচি শুরু করেছে।
এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভো থিয়েটারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ১০০টিরও বেশি স্কুলের ১০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী, শিক্ষক, বাবা-মা, গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারকগণ, শিল্পখাতের নেতৃবৃন্দ, তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের শীর্ষ ৫০ ইন্টারনেট পণ্য এবং ২০ লাখ অনলাইন ভিজিটর সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, এমপি। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এমপি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি এডওয়ার্ড বেগবেদার বলেন, ‘ইন্টারনেট তৈরি হয়েছিল বড়দের জন্য। তবে শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠী ক্রমবর্ধমানহারে এটি ব্যবহার করছে এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি ক্রমবর্ধমানহারে তাদের জীবন ও ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করে। তাই ডিজিটাল নীতিমালা, চর্চা ও পণ্যে শিশুদের প্রয়োজন, শিশুদের দৃষ্টিভঙ্গি ও শিশুদের বক্তব্য আরও ভালোভাবে প্রতিফলিত হওয়া উচিত।’
‘বিশ্ব শিশু পরিস্থিতি ২০১৭: ডিজিটাল দুনিয়ায় শিশুরা’’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী,ইন্টারনেটের যথাযথ ব্যবহার সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব শিশুদের ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার, তাদের ক্ষতিকর কনটেন্ট ব্যবহারের দিকে ঠেলে দেয়া ও অনলাইনে নিগ্রহের শিকার হওয়াসহ ঝুঁকি ও ক্ষতির মুখে পড়ার মাত্রা বৃদ্ধি করে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সর্বত্রই মোবাইল ডিভাইসের উপস্থিতি বড়দের তত্ত্বাবধান ছাড়াই অনেক শিশুর অনলাইনে প্রবেশের সুযোগ বাড়িয়েছে, যা একই সঙ্গে সম্ভাব্য অনেক বিপদও বাড়িয়েছে।
“দিনে দিনে শিশুরা অনলাইনে অনেক বেশি সময় ব্যায় করছে, তাই তাদেরকে অনলাইনে নিজেদের নিরাপদ রাখা এবং নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে জানানো খুব জরুরী। ‘অনলাইনে শিশুদের নিরপত্তা’ বর্তমান সময়ের শিশু, তাদের মা-বাবা ও শিক্ষকদের জন্য খুব জরুরী। আমাদের এই সম্মিলীত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা নিরাপত্তা ও প্রযুক্তি বিষয়ে শিশুদের সাথে কথোপকথন চালিয়ে যেতে চাই – যেমনটা আমরা তাদেরকে শিখাই কিভাবে জনাকীর্ণ জায়গায়, খেলার মাঠে ও স্কুলে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়,”, ফেইসবুক-এর ভারত এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রোগ্রাম প্রধান রিতেশ মেহতা বলেন।
শিশুদের জন্য অনলাইন নিরাপত্তার পক্ষে প্রচারণা চালাতে ইউনিসেফ ও ফেসবুকের মধ্যে সাম্প্রতিক এই সহযোগিতার লক্ষ্য হচ্ছে আরও কার্যকর নীতিমালা প্রণয়নে এবং শিশুদের সুবিধা প্রদানে আরও দায়িত্বশীল বাণিজ্যিক কার্যক্রমে সহায়তা দেওয়া, যার মধ্যে রয়েছে:
- সব শিশুর জন্য উচ্চ-মানসম্পন্ন অনলাইন উপকরণসমূহ সহজলভ্য করা।
- অপব্যবহার, নিগ্রহ, পাচার, সাইবার উৎপীড়ন ও অনুপযুক্ত বিষয়ের মুখোমুখি হওয়াসহ অনলাইনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হাত থেকে শিশুদের সুরক্ষা প্রদান করা।
- অনলাইনে শিশুদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও পরিচয় সুরক্ষিত রাখা।
- শিশুদের অনলাইনে সম্পৃক্ত ও নিরাপদ রাখতে তাদের ডিজিটাল শিক্ষা প্রদান করা।
- অনলাইনে শিশুদের সুরক্ষিত রাখে এবং তাদের উপকারে আসে- এমন নৈতিক মান ও চর্চাসমূহকে এগিয়ে নিতে বেসরকারি খাতের ক্ষমতাকে কাজে লাগানো।
- ডিজিটাল নীতিমালার কেন্দ্রে শিশুদের রাখা।
বছরব্যাপী এই কর্মসূচির লক্ষ্য হচ্ছে ডিজিটাল এই যুগে শিশুদের কল্যাণের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলো বিস্তারের মাধ্যমে ‘অনলাইন ঝুঁকি’ থেকে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সবমিলিয়ে আড়াই কোটি বাংলাদেশি শিশু এবং তাদের বাবা-মা ও শিক্ষকের কাছে পৌঁছানো।
-------------------------